প্রযুক্তি জাদুঘর
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানা যন্ত্র। তার ভেতর খেলা করছে কত আধুনিক প্রযুক্তি। সে সব প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের প্রতি দিনের জীবন এখন কত সহজ হয়ে এসেছে! এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কত মানুষের, কত দিনের শ্রম! একটু মনোযোগ দিয়ে চারপাশ দেখলে আর ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়।
একজন শিক্ষার্থীর জন্য চারপাশে যেন লুকিয়ে রয়েছে শেখার নানা উপাদান, বিষয়, ইতিহাস! চারপাশের নানা প্রযুক্তির মাঝে সে উপাদান, বিষয় আর ইতিহাসের খোঁজে শিক্ষা সভার এ প্রযুক্তি জাদুঘর।
অনলাইন এ জাদুঘরটি ২০২১ সালের ১লা নভেম্বর তারিখ থেকে চালু হয়েছে। এখন এ জাদুঘরের সংগ্রহ খুবই কম। আমরা আশা করি, ধীরে ধীরে এ সংগ্রহ সমৃদ্ধ হবে। সে যাত্রায় অংশ নিতে পারেন আপনিও। কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী আমাদের এ যাত্রায় তথ্য, ছবি বা মতামত দিয়ে অংশ নিলে আমরা খুশি হব।
প্রযুক্তি ও এ সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়
ছবিসূত্র: latimes.com
প্রযুক্তি
মানব জীবনের ব্যবহারিক লক্ষ্যে অথবা মানব পরিবেশকে পরিবর্তন ও মানুষের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে জ্ঞানের প্রয়োগ। প্রযুক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নানা উপাদান, হাতিয়ার, প্রযুক্তি ও শক্তির উৎস ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনকে সহজতর করা অথবা সুখকর করা এবং কাজকে আরও উৎপাদনশীল করে তোলা। বিজ্ঞান যেখানে কীভাবে এবং কেন কোনো কিছু ঘটে, তা নিয়ে মাথা ঘামায়, প্রযুক্তি সেখানে কোনো কিছু ঘটানোর উপর মনোযোগ দেয়। মানুষ হাতিয়ার ব্যবহার শুরুর পরপরই প্রযুক্তি মানুষের প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছিল। শিল্প বিপ্লব এবং পশু ও মানব শ্রমের বদলে যন্ত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রযুক্তির প্রসার ত্বরান্বিত হয়েছিল। ত্বরিত গতিতে ঘটা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য দামও দিতে হয়, বায়ু ও পানি দূষণ এবং অন্যান্য অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে।
ছবিসূত্র: Nandhu Kumar on Unsplash
প্রযুক্তি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ
প্রযুক্তি শব্দের ইংরেজি ‘টেকনোলজি’। শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘টেকনে’ (technē) ও ‘লগোস’ (logos) থেকে। গ্রিক ভাষায় ‘টেকনে’ শব্দের অর্থ শিল্প বা নৈপুণ্য। আর, ‘লগোস’ অর্থ শব্দ, বক্তব্য। অর্থাৎ, কারুশিল্প এবং প্রায়োগিক শিল্প বিষয়ক আলোচনা। ১৭শ শতকে টেকনোলজি শব্দটি প্রথম ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
ছবিসূত্র: thefinancialexpress.com.bd
উৎপাদনের যান্ত্রিকীকরণ
উৎপাদনের যান্ত্রিকীকরণ হল কায়িক শ্রমকে যন্ত্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করা। যন্ত্র এবং যান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করা হলে তা শ্রমিকদের কষ্টকর, শ্রম-সাপেক্ষ কায়িক শ্রম থেকে মুক্তি দেয়। ঐতিহাসিকভাবে, শ্রম-সাপেক্ষ এবং কষ্টকর কাজ প্রাথমিকভাবে মৌলিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ হয়েছিল; এরপরও অন্যান্য কাজে, বিশেষত সহায়ক কাজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কায়িক শ্রম টিকে ছিল। এটা আংশিক যান্ত্রিকীকরণ।
ছবিসূত্র: britannica.com
শিল্প বিপ্লব
শিল্প বিপ্লব এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক ও হস্তশিল্প-নির্ভর অর্থনীতি কলকারখানা ও যন্ত্রভিত্তিক উৎপাদন-নির্ভর অর্থনীতিতে পরিবর্তিত হয় । আঠারো শতকে ইংল্যান্ডে এটি শুরু হয়। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে ছিল লোহা ও ইস্পাত ব্যবহার, শক্তির নতুন-নতুন উৎস, স্পিনিং জেনিসহ নতুন যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি, কারখানা ব্যবস্থার উন্নতি এবং বাষ্পীয় ইঞ্জিন ও টেলিগ্রাফসহ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। অন্য পরিবর্তনগুলোর মধ্যে ছিল কৃষি খাতের উন্নয়ন, আরও বিস্তৃত ক্ষেত্রে সম্পদের বণ্টন, রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তন। অর্থনৈতিক ক্ষমতার এই পালাবদল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। শিল্প বিপ্লব ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত মূলত ব্রিটেনে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে এটি বেলজিয়াম ও ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে তখন অন্য দেশগুলো পিছিয়ে ছিল। কিন্তু জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান যখন শিল্পায়নের ক্ষমতা অর্জন করে, তখন তারা ব্রিটেনের প্রাথমিক সাফল্যকে ছাড়িয়ে যায়। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো বিংশ শতকে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। বিংশ শতকের মধ্যভাগের আগ পর্যন্ত চীন, ভারত ও অনুরূপ দেশগুলোতে শিল্প বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ে নি। অনেক বিশ্লেষক বিংশ শতকের পরে দ্বিতীয় অথবা নতুন শিল্প বিপ্লবের নজির দেখেছেন। এক্ষেত্রে বিশ্লেষকগণ নতুন উপকরণ/উপাদান ও শক্তির উৎসের ব্যবহার, স্বয়ংক্রিয় কারখানা, উৎপাদনের উপকরণের উপর নতুন মালিকানা এবং অর্থনীতিতে অবাধ নীতি সমর্থক সরকার থেকে সরে আসাকে নজির হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
ছবিসূত্র: history.com
শিল্পায়ন
কোনো আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা শিল্পপ্রধান ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে শিল্পায়ন বলা হয়। আঠারো শতকের শেষের দিকে ও উনিশ শতকে শিল্প বিপ্লবের সময় ব্রিটেনে যে পরিবর্তনগুলো ঘটেছিল, তা পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার শিল্পায়িত দেশগুলোকে এ ক্ষেত্রে পথ দেখিয়েছিল। শিল্পায়নের ফলে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত এবং ব্যাপক সামাজিক অগ্রগতি ঘটেছিল। সামন্ততান্ত্রিক ও প্রথাগত বাধ্যবাধকতা থেকে শ্রমিকদের মুক্তি শ্রমের মুক্ত বাজার তৈরি করেছিল। এ বাজারে ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। শহরগুলো বিপুল সংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। নতুন শিল্প-নগরী ও কল-কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা জড়ো হচ্ছিল। শিল্পায়নে যে সব দেশ দেরী করে যোগ দেয়, তারা কিছু কিছু উপাদান ব্যবহার করার চেষ্টা করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন উদ্যোক্তাদের রাখে নি। জাপান উদ্যোক্তাদের ভূমিকাকে উৎসাহিত করেছিল এবং টিকিয়ে রেখেছিল। ডেনমার্ক ও নিউ জিল্যান্ড কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে শিল্পায়িত হয়েছিল।
ছবিসূত্র: newagebd.net
উৎপাদনের উপকরণসমূহ
বস্তুগত সম্পদ তৈরি করতে, সামাজিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শ্রমের উপকরণ ও বস্তুকেই যৌথভাবে উৎপাদনের উপকরণ বলা হয়।
প্রযুক্তির ভাষায়
আমরা যেমন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলি, তেমনই প্রযুক্তিরও যেন রয়েছে একটি নিজস্ব ভাষা। সে ভাষার আলাদা কোনো বর্ণমালা নেই। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে সব শব্দ ব্যবহার করি, প্রযুক্তির নানা ক্ষেত্রে অনেক সময় সেগুলোই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সে সব শব্দের অর্থ হয় প্রচলিত অর্থ থেকে ভিন্ন। এখানে সে রকম কিছু শব্দ যুক্ত করা হয়েছে।
আমাদের চারপাশে ব্যবহৃত কিছু প্রযুক্তির উদাহরণ
দ্রষ্টব্য: এখানে উপস্থাপনকৃত সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিদ্যুৎ হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়েছে। চলন্ত অবস্থায় এবং সাবধানতা ছাড়া কোনো যন্ত্রে হাত দেয়া যাবে না। নবীন শিক্ষার্থীরা চারপাশের কোনো বৈদ্যুতিক, ধারালো বা বিপজ্জনক যন্ত্র শিক্ষক বা উপযুক্ত সাহায্যকারী ছাড়া ধরবেন না। সে ক্ষেত্রে, কোনো রকম দুর্ঘটনার দায় শিক্ষা সভা বহন করবে না।